অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মার্কিন সেনাবাহিনী সিরিয়ার রাকা প্রদেশে একটি অত্যাধুনিক সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করার প্রাথমিক আয়োজন সম্পন্ন করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে জুলানির নেতৃত্বাধীন সরকার কোনো প্রতিবাদ জানায়নি।
সিরিয়ার বিভিন্ন সূত্র জুলানির সবুজ সংকেত নিয়ে দেশটির রাকা প্রদেশে প্রথম স্থায়ী মার্কিন ঘাঁটি নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার খবর জানিয়েছে। পার্সটুডে জানাচ্ছে, মার্কিন বাহিনী ওই ঘাঁটি নির্মাণ করার জন্য গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইরাক থেকে সিরিয়ায় নেয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাকা শহরের উপকণ্ঠে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা ওই ঘাঁটির প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
এর কয়েকদিন আগে জানা গিয়েছিল যে, ডেলটা নামক মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সেনারা ইরাকের আল-ওয়ালিদ ক্রসিং দিয়ে সিরিয়ার রাকায় প্রবেশ করেছে।
এদিকে সিরিয়ার কুর্দি ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স বা এসডিএফ খবর দিয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরের উপকণ্ঠে ‘তিশরিন’ বাঁধের কাছে একটি টিলার উপর সেনা ঘাঁটি নির্মাণ করার চেষ্টা করছে তুরস্ক। এসডিএফ এ খবর জানিয়ে বলেছে, তারা নির্মাণাধীন ওই ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।
মার্কিন সমর্থনপুষ্ট এসডিএফ সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে; কিন্তু তুরস্ক এই বাহিনীকে নির্মূল করতে চায় এবং মূলত এই অজুহাতে আঙ্কারা সিরিয়ায় নিজের সেনা মোতায়েন করেছে। তুর্কি বাহিনী এসডিএফের হাত থেকে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দখল নিজেদের হাতে নিতে চায়।
এ অবস্থায় আবু মোহাম্মাদ জুলানির নেতৃত্বাধীন তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আশ-শাম বা এইচটিএস সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করায় ধারনা করা যায়, আগামী দিনগুলোতে এসডিএফের ওপর দামেস্কের পক্ষ থেকেও চাপ বাড়বে।
অন্যদিকে তুরস্ক ও আমেরিকা যখন সিরিয়ায় নিজেদের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে তখন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সিরিয়ায় তার দেশের সেনা ঘাঁটি নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে জার্মানিতে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালিনা বায়েরবক সম্প্রতি দামেস্ক সফরে গিয়ে বলেছেন, রাশিয়াকে সিরিয়া থেকে সেনা ঘাঁটি গুটিয়ে নিতে হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন: “এমন একটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বক্তব্য দিয়েছেন যার নিজের দেশে আমেরিকার একাধিক সেনা ঘাঁটি রয়েছে। আমার একটি প্রশ্ন আছে: জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি তার দেশ থেকে সেনা ঘাঁটি গুটিয়ে নিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানাতে পারবেন?”
জুলানির নেতৃত্বাধীন হায়াত তাহরির আশ-শামের সশস্ত্র বিদ্রোহীরা বাশার আল-আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে। এর ১১ দিনের মাথায় ৮ ডিসেম্বর তারা রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়া ত্যাগ করেন।
আসাদ সরকারের পতনের পর রাশিয়া সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন অস্থায়ী চৌকি থেকে নিজের সেনা প্রত্যাহার করে নিলেও এখন পর্যন্ত লাতাকিয়া প্রদেশের হামিমিম বিমান ঘাঁটি ও তারতুস বন্দরে অবস্থিত নৌঁঘাঁটি থেকে নিজের সেনা প্রত্যাহার করেনি।
Leave a Reply